প্রেমিকা কিংবা মিসেস হওয়া অতি সহজ, কিন্তু মিস্ট্রেস হওয়া সহজ নয়; মিস্ট্রেস হওয়ার আগ্রহ করো থাকে না।
বর্তমান নারীসমাজের যারা মিসেস হয়ে মিস্ট্রেস এর মর্যাদা আসা করেন তারা ভুল করেন। আমের মাঝে আমের স্বাদই থাকে, কাঁঠালের স্বাদ থাকে না।
'নারীর সম অধিকার চাই' কথাটা তাদের মুখেই শোভা পায় যারা মিস্ট্রেস হওয়ার মানসিকতা লালন করে।
বেগম রোকেয়া এবং কাজী নজরুলও সেই কথাটাই সেইকাল থেকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু আজও অনেকে তা সঠিকভাবে না বুঝে উল্টাভাবে বুঝে থাকেন।
'একজন সুপুরুষ এর সাথে বিয়ে হবে আর সুখে থাকবো' এই মানসিকতা নিয়ে যে জন্মায় সে কোনদিনও মিস্ট্রেস হয় না। সেই মিস্ট্রেস হয় যে একজন সংগ্রামী ও উদ্যমী পুরুষের বন্দুর পথের সঙ্গী হয়। তার প্রতি সেই পুরুষটির যে অনুভূতি থাকে তা জগতের কোন ভাষায় কোন পদ্ধতিতে অন্যকে বোঝানো সম্ভব নয়।
শরৎচন্দ্র এই কথাটাই 'বিলাশী' গল্পে বোঝাতে চেয়েছেন।
মিস্ট্রেস হতে হলে ত্যাগের বিনিময়ে কিছু পেতে হয়, এমনি এমনি পাওয়া যায় না। যে সুপুরুষ নিজের উচ্চ মর্যাদার বিনিময়ে একজন মেয়েকে কিনে নেয় সে তাকে সম্পত্তিই মনে করবে, মিস্ট্রেস এর মতো করে তাকে মূল্যায়ন করবে না। এইটাই রবীন্দ্রনাথ 'হৈমন্তী' গল্পে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন।
বাইকওয়ালা বিত্তশালী হ্যান্ডসাম ছেলের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার গার্লফ্রেন্ড হয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া, আনন্দ বিনোদন করা আর মিস্ট্রেস হওয়া এক নয়।
সেই ফুলবাবু আর ফুলটুসি'র প্রেম অনুভূতি বেশিরভাগ সময়েই সহজেই হারিয়ে যায়, পরিণতি হয় ছ্যাঁকা, ধোকা কিংবা ডিভোর্স। কিন্তু সংগ্রামী মিস্টার আর মিস্ট্রেস এর কোনো বিচ্ছেদ কাহিনী ইতিহাসে দেখা যায় না।
বয়ফ্রেন্ডের চোখে গার্লফ্রেন্ড হলো শখের এবং আদরের জিনিস; গার্লফ্রেন্ডের চোখে বয়ফ্রেন্ড হলো ভলান্টিয়ার। বরের চোখে বউ হলো সম্পত্তি; আর বউয়ের চোখে বর হলো স্বামী।
একজন লুচ্চা প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা হলো খেলনাবস্তু আর একজন সুবিধাবাদী প্রেমিকার কাছে প্রেমিক হলো শর্তহীন ও ফ্রিতে উপভোগের বস্তু।
কিন্তু একজন সংগ্রামী মিস্টার আর মিস্ট্রেস এর একে অন্যকে মূল্যায়ন করার সুত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তবে একথা ঠিক যে, খুব কম মেয়েই জীবনে মিস্ট্রেস হওয়ার মতো পরিবেশ পায়; মেয়েরা আজীবনই বিক্রি হয়- কখনও ভাগ্যের নীল নকশার কাছে, কখনও টাকার কাছে তথা লোভনীয় শক্তির কাছে, কখনও বাবা-মা'র ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে, কখনও সমাজের নিয়ম নীতির কাছে।
তবে বেশ কিছু মেয়ে আছে যারা চাইলে তা করতে পারতো কিন্তু তা না করে সেই সীমিত সুযোগটা অন্য ক্ষেত্রে ব্যয় করে। অর্থনীতিতে সুযোগ ব্যয় বলে একটা জিনিস আছে; সেইসব মেয়েরা তাদের সেই সুযোগটা মিস্ট্রেস হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় না করে ব্যয় করে ফুলবাবুদের খেলনা হওয়ার ক্ষেত্রে।
বিষয়টা এমন যে, ইচ্ছা করলে ধুমপান না করে সেই টাকা দিয়ে দুধ খাওয়া যেতো কিন্তু তা কেউ করে না।
আমার অভিভাবকরা আমাকে উপদেশ দেয়, জীবনে বড় কিছু হলে তোর তো মেয়ের অভাব হবে না, সুন্দর বা শিক্ষিত যেমন চাবি তেমনই পাবি। আমি এইখানেই ভিন্ন, এইখানেই গ্রেট; যাকে আমার মর্যাদার বিনিময়ে কিনে নেবো, তাকে নিজস্ব অধিকারই মনে করবো, তাকে ব্যবহার করবো অন্য দশটা জিনিসের মতো, কিন্তু তাকে ভালোবাসতে আমি পারবো না।
আজকাল সবকিছুর যদি মিনিপ্যাক ও ইজিপ্যাক কিনতে পাওয়া যায় তাহলে পাইকারি একটা মেয়ে কেনার দরকার কী?
কিন্তু আমি মিনিপ্যাক কিনতে চাই না, আমি লাইফটাইম প্যাক চাই তা আবার কিনে নয়, অর্জন করে।
যে মিসেস হয় সে আমার কাছে বেশি মহান নয়, আমার উপর আস্থা রেখে পাশে থেকে যে মিস্ট্রেস হবে সেই বেশি মহান।
বিষয়টি এতদিন শুধু ভাবনাতেই ছিল, প্রকাশের কাঠামো পাচ্ছিলাম না। আজ বিপ্লবী সাইমন বলিভার এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ডোমিঙ্গো পেরেরো'র জীবনী পড়ে অনুধাবন করতে পারলাম যে মিস্ট্রেস আসলে কী জিনিস!
© মেহেদী হাসান, Life Magazine
No comments:
Post a Comment